(০৪ অক্টোবর ২০১২) বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে ভারতের দক্ষিন ত্রিপুরা রাজ্যসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে ব্যবসা-বানিজ্য সসম্প্রসারনের লক্ষ্যে তিন বছর আগে ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনটি স্থল বন্দরে রুপান্তরিত হয়। প্রশাসনিক ভবন, ওয়্যার হাউস, ট্রাক ইয়ার্ড, সড়ক পথ সম্প্রসারন, রেল পথ মেরামত ও পুনঃস্থাপনসহ অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন না হওয়ায় এখনও পূর্নাঙ্গতা পায়নি এ বন্দরটি। এক পক্ষিয় রপ্তানি হলেও আমদানি হচ্ছে না কিছুই। ফেনী কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১১ মার্চ ফেনী বিলোনিয়া স্থল বন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্থল বন্দর চালুর জন্য বাংলাদেশ ভারত সীমানা পিলার ২১৬০ এর কাছে বর্তমান কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন অফিস সংলগ্ন সড়কটিকে ৩৪ ফুট প্রশস্থ করে স্থানীয় মজুমদার হাট বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ১০০ মিটার সংস্কার করা হয়। পরবর্তীতে স্থলবন্দরের বিভিন্ন কাজ অসমাপ্ত রেখেই ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর ফেনীর বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিলোনিয়া স্থল বন্দরে রুপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকারের বন্দর ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের বানিজ্য মন্ত্রী জীতেন্দ্র চৌধুরী, বাংলাদেশস্থ ভারতের রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ও ত্রিপুরা রাজ্যের এমএলএ বাসুদেব মজুমদারের উপস্থিতিতে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করলেও গত তিন বছরে এখনও বন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মেলেনি। নির্মিত হয়নি নিজস্ব ভবন, ওয়্যার হাউস, ট্রাক ইয়ার্ড, শেড কন্টেইনার টার্মিনাল, গুদাম, রাসায়নিক পরীক্ষাগার, ষ্টাফ কোয়ার্টার, নিরাপত্তারক্ষীদের ডরমিটরি, সড়ক পথ সম্প্রসারন, রেল পথ মেরামত ও পুনঃস্থাপননির্মান সহ বিভিন্ন অবকাঠামো। পণ্য রাখার গোডাউন ও পরীক্ষাগার না থাকায় মালামাল প্রতিনিয়িত লোড আনলোডে সমস্যা হচ্ছে। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রফতানিকারকরা। শ্রমিকদেরও নেই বিশ্রামের কোন স্থান। বন্দর চালু হওয়ার পর সরকার এখাত থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় করলেও একটি পুরনো ও পরিত্যক্ত ভবনে মাত্র একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়ে চলছে বন্দরের কর্মকান্ড। অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় রফতানীকারদরে মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। গত তিন বছরে এই বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে (শুধু একমূখী বানিজ্য) ৯৮ লাখ ৬২ হাজার ৫শ ৮৩ মেট্রিক টন পন্য রপ্তানি করেই একশ কোটি ৯৪ লাখ ৬২ হাজার ৮শ ৪৪ টাকা বৈদেশিক মূদ্রা আয় হয়েছে। অপরদিকে আমদানি হয়েছে মাত্র শুটকির একটি চালান। বিলোনিয়া সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন সদস্য জানান, শুরু থেকে স্থল বন্দর দিয়ে ইট, পাথর, সিমেন্ট, রড, চুন ও গার্মেন্টস সামগ্রী রপ্তানী করা হলেও বর্তমানে সিমেন্ট, পাথর ও রড ছারা আর কিছুই রপ্তানি হচ্ছে না। সংশি¬ষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে ইট রপ্তানি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে ভারত থেকে গরু, বাঁশ, কাঠসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির সুযোগ থাকলেও সে দেশের কাস্টমস কর্মকর্তাদের বাধার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বিলোনিয়া আমদানি ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্রো জানান, বিলোনিয়া স্থল বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ ট্রাক মালামাল লোড-আনলোড হয়। প্রতিদিন রপ্তানি কার্যক্রম চললেও বন্দরে কোনো কর্মকর্তা থাকেন না। এতে করে ব্যবসায়ীদের প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে ফেনীতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সই আনতে হয়। ফেনী কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট অফিসের ল্যান্ড কাষ্টমস রেভিনিউ অফিসার মো ঃ হেলাল উদ্দিন জানান, দেড় কাঠা জায়গার ওপর দুইটি ভাঙ্গা টিনশেড ঘরে বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনটি কোনরকম বন্দর হিসেবে চালু হলেও এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে হলে জনবল বৃদ্ধি সহ সকল কিছুর উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে তিনি স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। ন্যুনতম আরো ৪০-৫০ একর জায়গা অধিগ্রহন করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, সড়ক প্রশস্তকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করলে ও ভারতের সাথে ট্রানজিট চুক্তি হলে এই বন্দরে কাজের চাপ আরো বেড়ে যাবে এমনটায় মনে করছেন এখানকার আমদানী রপ্তানিকারকরা। আর এ জন্য সরকারের সংশ্লি¬ষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজর প্রয়োজনও বলে মনে করেন তারা।
-->