ফেনীতে নিন্মমানের মোবাইল সেট ও যন্ত্রাংশে বাজার সয়লাব।

(০২ সেপ্টেম্বর ২০১২) নিন্মমানের মোবাইল ফোন সেট ও মোবাইল যন্ত্রাংশে সয়লাব ফেনীর বাজার। ১ হাজার ৪শ থেকে ১ হাজার ৯শ টাকা মূল্যের এসব মোবাইল ফোন সেট বিক্রির সময় কোনো গ্যারান্টি কিংবা ওয়ারেন্টি দিচ্ছে না বিক্রেতারা। এই ফোন সেটগুলোর হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যারের কোনো সমস্যা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেরামতের কোনো উপায় থাকে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেরামত করা সম্ভব হলেও তা বেশিদিন টেকসই হয় না। নিন্মমানের এই মোবাইল ফোন সেটগুলো আসছে চায়না থেকে। এসব মোবাইল ফোন সেট কিনে রীতিমতো ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।৯ফেনীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, নিন্মমানের মোবাইল ফোন সেট বিক্রির ধুম। বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার ও নামকরা ব্র্যান্ডের নাম ভাঙিয়ে এবং লেভেল লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এসব মোবাইল ফোন সেট। ১৬শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে এফএম রেডিও, ক্যামেরা, অডিও, ভিডিও, ইন্টারনেট, ডাবল সিম কার্ড, বøুটুথসহ আরো বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামযুক্ত মোবাইল ফোন সেট। বিক্রি হওয়া এসব ফোন সেটের প্রায় সবই চায়নার বিভিন্ন বেনামি কোম্পানির। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য- ফ্যাশন, ব্লুটুথ, এমপি ফোর, এলকাটেল, টেকনো, এইচটিসি, ফর মি, সি ফাইভ, উইয়িং, ফরমি, লি ফোন, নোকলা, ডিস্পিল, গিলভ, এমটিভি, ডিডাবøুএস, কিংসটেল, কুয়িক শেয়ার, ভিএস এন্ড মিসহ অর্ধশতাধিক ভুয়া ব্র্যান্ড। এছাড়াও নকিয়া, স্যামসাং, আইফোন, সনি এরিকসন, সনি, সিম্পনিসহ বেশ কয়েকটি নামকরা ব্র্যান্ডের নকল মোবাইলে সয়লাব বাজার। ফেনী শহীদ মার্কেটের মোবাইল বিক্রেতা আবদুল হাই আলোকিত বাংলা প্রতিবেদককে জানান, বাজারে এখন নকল মোবাইলের ছড়াছড়ি। এসব মোবাইল ফোন কিনে সাধারণ মানুষ রীতিমতো প্রতারিত হচ্ছে। দাগনভূঞার মোবাইল ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, এসব নিন্মমানের মোবাইল কিনে সাধারণ মানুষ খতিগ্রস্থ হচ্ছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার নতুন মোবাইল কিনতে হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন এবং ভারতীয় মাইক্রোম্যক্স এখন অনেক গুণে ভাল। সোনাগাজীর একটি মার্কেটে মোবাইল ফোন মেরামত করতে আসা রোকন জানান, দু’মাস আগে ফেনীর একটি শোরুম থেকে নকিয়া এন-৮ মডেলের একটি চায়না মোবাইল ফোন সেট কিনেছেন তিনি। এর পরই মোবাইলটি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা করতে শুরু করে। আর তিন মাসের মাথায় এটি সার্ভিসিং সেন্টারে আনেন তিনি। সার্ভিসিং সেন্টার থেকে তাকে জানানো হয় এই মোবাইল ফোট সেটের সমস্যার কোনো সমাধান নেই। ঠিক করতে গেলে এটি আর নাও চালু হতে পারে। ফলে এটি ঠিক করার থেকে না করাই ভালো। রোকন জানান, এই ধরনের মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার করা মানে অনিশ্চয়তায় ভোগা। যে কোনো মুহূর্তে এগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে এগুলো ব্যবহার করার থেকে না করাই ভালো। মোবাইল ফোন সেট মেরামতকারীরা জানান, চায়না কোম্পানিগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বেশি সমস্যা হয় স্কিন টাচ মোবাইলের। দু’তিন মাসের মাথায় এগুলোর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অন্যান্য মোবাইলগুলো অত্যাধিক গরম এবং স্পিকার নষ্ট হয়। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসমেন এসোসিয়েশনের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর বিক্রি হচ্ছে ১ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন সেট। চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে এই সেটগুলো। প্রতি মাসে যে সব মোবাইল ফোন সেট বিক্রি হয় এর মধ্যে ২ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন বিক্রি হয় প্রায় ৬০ শতাংশ, ২ থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যের ৪০ শতাংশ এবং ৫ হাজার টাকার ওপরে প্রায় ১০ শতাংশ মোবাইল ফোন সেট বিক্রি হচ্ছে। দেশের নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা জীবন-জীবিকা ও যোগাযোগ রক্ষার জন্য সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ২ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন সেট। তারাই বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বিদেশ থেকে নিন্মমানের মোবাইল ফোন আমদানি করে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র।