ফরেন্স রেমিটেন্স খ্যাত ফেনীর ঈদ বাজারে মানুষের ঢল। ইন্ডিয়ান কাপড়ে সয়লাভ বাজার।

(১২ আগষ্ট ২০১২) ফেনীতে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। বেচ-কেনার ধুম পড়েছে। শহরবাসী এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পর করছে। ইন্ডিয়ার শাড়ি ও থ্রিপিসে বাজার সয়লাভ হওয়ায় প্রতিদিন শহরের শপিংমল, ফুটপাত গুলোতে ভিড় জমাচ্ছে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিæবিত্তসহ নানা শ্রেণীর ক্রেতা। প্রবাসীর অর্থে নির্ভরশীল পরিবারগুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও অঞ্চল থেকে ফেনী বাজারে এসে কেনা কাটায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। প্রতিদিন উপচে পড়া ঈদ কেনা কাটায় আগের বছরগুলোর তুলনায় মার্কেটগুলো আরো বেশি জমজমাট বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। ফেনী বড় বাজারসহ প্রায় সবগুলো শপিং মল ও দোকানগুলোতে ক্রেতারা মেতে উঠেছে কেনাকাটায়। বিক্রেতারা পণ্যের আকাশ চুম্বি দাম হাঁকালেও ক্রেতাদের কেনাকাটা থেমে নেই। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। তবে জমজমাট বেচা-কেনার জন্য তারা খুশি। অবশ্য দামের কারণে নিæ আয়ের অনেককেই শপিং মল ঘুরে ফিরে যেতে দেখা গেছে। শহরের শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপণী বিতান, গ্র্যান্ড হক টাওয়ার, এফ রহমান এসি মার্কেট, জুম্মা শপিং কমপে¬ক্স, তমিজিয়া শপিং কমপে¬ক্স, গ্রীন টাওয়ার, ফেনী প¬াজা, সিটি প¬াজা, রহমান মার্কেট, জামাল মার্কেট, গুলশান মার্কেট, বনানী মার্কেট, মহিপাল প¬াজা, সমবায় সুপার মার্কেট, আলী আহম্মদ টাওয়ার, হাজী লতিফ টাওয়ার, নিউ মার্কেট, সওদাগর পট্টিতে ক্রেতাদের ভীড় বেড়েছে। রাজাঝির দীঘির পাড়ের ফুটপাতে দোকানগুলোতে বেশ কেনাকাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে পণ্য সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মধ্যে বিরক্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি মার্কেটেই নতুন নতুন মডেলের ইন্ডিয়ান শাড়ী, ইন্ডিয়ান থ্রিপিস, ঝিলক নেট থ্রিপিস, টাপুর টুপুর থ্রিপিস, খুশি থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, কাটা থ্রিপিস, পাঞ্জাবী, শার্ট-প্যান্ট ও জামার পসরা সাজানো হয়েছে। বিগত বছরের মতো এবার ঈদ ফ্যাশনে নারীদের পোষাকে মশারী কাপড়ের বহু মাত্রিক ব্যবহার ছিল লক্ষ্যণীয়।
এবারও শাড়ীতে মশারী কাপড় স্থান করে নিয়েছে। শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপণী বিতানের সাকির ডির্পামেন্টাল ষ্টোর এর স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম সবুজ জানান বিক্রি খুবই ভাল। তবে, দাম বাড়ার কারণে ক্রেতারা দর কষাকষি করলেও এক দামের কারণে ন্যায্য দামে কিনতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ২০ রোজা পর্যন্ত প্রতিদিন লাখ দুয়েক টাকা বিক্রি হলেও ঈদের আগের দুই একদিন লাখ তিন এক টাকা ছড়িয়ে যাবে। দোকান ঘুরে দেখা যায়, ঝিলিক নেট থ্রিপিস ২০০০-১৫০০০, টাপুর-টুপুর থ্রিপিস ৩০০০-১২০০০, খুশি থ্রিপিস-২৫০০-১১০০০, গাদোয়ান শাড়ী ৫০০০-১৬০০০, মাসলাইন শাড়ী-৫০০০-১৫০০০, টিসু/নেট শাড়ী-৩০০০-৭০০০, সুতি জামদানী শাড়ী-১৫০০-১০,০০০, শার্ট-৫০০-৪০০০ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। এ মার্কেটে বিলাস শো-রুম’র মালিক আবুল হাসনাত রনি জানান, ইন্ডিয়ান জামদানি ২০০০-৫০০০, ইন্ডিয়ান থ্রিপিস ২০০০-৪০০০, পাকিস্তানী লেহেঙ্গা ৩০০০-৮০০০, দেশীয় জুট কাতান শাড়ী ১৫০০-৩৫০০ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। এ মার্কেটে মহিলাদের শো-রুম মনময়ূরী, ইউসুফ, বণিক, জেন্টস শো-রুম এক্স পয়েন্ট, প্রিন্স, ব্লু আই, কিডস্ শো-রুম পেহেলী ও লন্ডনী জুতা শো-রুমে প্রচুর ভিড় লক্ষ করা গেছে। এদিকে গ্রান্ড হক টাওয়ারের ড্রীম পয়েন্ট পাঞ্জাবী দোকানের পরিচালক সৈয়দ রইসুল রিমন জানান, প্রতিদিনই পাঞ্জাবীর ক্রেতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিক্রয়ও ভালো হচ্ছে। এখানে ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবী ১৬০০-২৪০০, আড়ং ৮০০-২২০০, ওয়াস পয়েন্ট ১০০০-২৮০০ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। এ মার্কেটে মহিলাদের শো-রুম অহং, মায়াবি, নন্দন, রিচ ফ্যাশান, জেন্টস শো-রুম ড্রিম পয়েন্ট ও ইয়ুতফুল জুতার শো-রুমে প্রচুর ভিড় লক্ষ করা গেছে। অপরদিকে তমিজিয়া মার্কেটের জেন্টস্ পার্ক-এর স্বত্ত¡াধিকারী খালেক ইমাম জুয়েল জানান রিয়েলিটি, আড়ং’র বেশ কিছু পাঞ্জাবী প্রতি চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের। আড়ং ১০০০-৩৫০০, রিয়েলিটি ৮০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শার্ট ৬০০-১৫০০, নরমাল প্যান্ট ৬০০-২০০০, জিন্স প্যান্ট (চায়না/ থাই) ২০০০-৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু জেন্টস পোষাক থাকায় প্রতিদিন ২০,০০০-২৫,০০০ টাকা বিক্রি হলেও শেষের দিকে অর্ধ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও ওই মার্কেটের পাশে জুম্মা মার্কেটের ‘এবং’ ‘নিত্য নতুন’ ও ‘রং রূপ’ এ প্রচুর ভিড় লক্ষ করা গেছে। এফ রহমান এসি মার্কেটে রেডিস শো-রুমে মনপুরা, সাব্বির, জেন্টস শো-রুমে হাবিব ফ্যাশন রক অন, শিশুদের শো-রুম তানজিমস এ প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল বিক্রয় হচ্ছে। অপরদিকে ট্রাংক রোডের ‘হাকিমস্’, ‘শতাব্দী’ ও ফেনী প্ল¬াজার ‘গৌধুলী ফ্যাশান’, লতিফ টাওয়ারের ‘সিটি ম্যাক্স’, পোষ্ট অফিস রোডের ‘ম্যাক্স ম্যাট’, সমবায় মার্কেটের ‘আধুনিকা’, এসএসকে রোডের ‘নন্দন’ ও ‘পিউলি’তে প্রচুর ক্রেতার সমাগম ঘটেছে। ঈদ মার্কেটে আসা একাডেমীর জোহরা বানু নাসরিন জানান, নতুন নতুন থ্রি পিস, শাড়ি পাওয়া গেলেও গত বছরের তুলনায় দাম বেশি চাচ্ছে বিক্রেতারা। এছাড়া জামাল মার্কেটের ‘এসএস গার্মেন্টস’ থেকে সরওয়ার হোসেন তার মেয়ের জন্য পছন্দনীয় জামা কিনে দিতে পেরে খুশি হয়েছেন। জামা কাপড়ের পাশাপাশি জুতার দোকানগুলোতে প্রচন্ড ভিড় লক্ষ করা গেছে। পাঞ্জাবী কিংবা থ্রিপিস বা শাড়ীর সাথে ম্যাচ করে জুতা সেন্ডেল কিনছে অনেকেই। শহীদ বিপণী বিতানের লন্ডনী-সু, আফসানা-সু’তে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। এছাড়াও ট্রাংক রোডে বাটা বাজার, এপেক্স গ্যালারী, মেট্রো এন্ড কোং, অটবী সুজ সবগুলোতেই প্রচন্ড ভিড় ঠেলে জুতা কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রতিটি শো-রুমে নুন্যতম ৫০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত জুতা পাওয়া যাচ্ছে। ডাক্তার পাড়া থেকে স্বর্ণা বাটা বাজারে এসেছে জুতা কিনতে। ঈদের জামা কেনা শেষ। এখন এগুলোর সাথে মিলিয়ে সে কিনবে ঈদের জুতা, স্বর্ণা তার পছন্দ মতো জুতা খুঁজে না পেয়ে হতাশ। তার বাজেট ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে। ফেনী বাটা বাজারের বিক্রেতারা জানান, পুরুষ ক্রেতাদের নতুন ডিজাইনের সেন্ডেল বেশী আগ্রহী। জামা কাপড় জুতার পাশাপাশি কসমেটিকস দোকানগুলোতে প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন বয়সের তরুনীরা ম্যাচ করে গহণাসহ বিভিন্ন প্রসাধনী কিনছে। স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে গত বারের মতো এবারও তরুণীদের বিশেষ পছন্দ রুপার গয়না। এদিকে রোজার ঈদ মানেই হাতে মেহেদী লাগাতে হবে। নারীরা এবার পাকিস্তানি মেহেদীর প্রতি ঝোক বেশি। পাকিস্তানি প্রতিটি টিউব মেহেদী ৮০-১০০ ও দেশী টিউব মেহেদী ৪০-৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অপরদিকে শহরের একমাত্র ফুটপাত রাজাঝির দীঘির পাড়ের দোকানগুলোতে প্রচন্ড ভিড় ঠেলে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। নিম্ন আয়ের ক্রেতারাই এখান থেকে ঈদের জামা কাপড় কিনছেন। এদিকে জেলার প্রতিটি উপজেলার মার্কেট গুলোতে চলছে ঈদের কেনা-বেচা। ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী উপজেলার মার্কেট গুলোতে প্রবাসী পরিবারের ক্রেতাকে বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।