তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি গঠনের লক্ষে ২০০৩ সালের ৬ অক্টোবর ফেনী জেলা
সদরের অদূরে নতুন রাণীর হাটে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম ও একমাত্র সরকারি
কম্পিউটার ইনষ্টিটিউট, যার নামকরণ করা হয় "ফেনী কম্পিউটার ইনষ্টিটিউট"।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাক্রম কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৫ সালে বাংলাদেশ কারিগরি
শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে। এখানে দুটি ডিপার্টমেন্ট-এ ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা
ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ার সুযোগ রয়েছে, একটি হল "কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী"(সি.এস.টি) এবং "ডাটা টেলিকমিউনিকেশন এন্ড নেটওয়ার্কিং"
(ডি.এন.টি)। দুটি ডিপার্টমেন্ট প্রতি বছর ৪৮ জন করে মোট ৯৬ জন করে ভর্তি
করানো হয় (এই বছর হতে ২য় শিফট চালু হওয়ায় ১৯২ করে পড়ার সুযোগ পাবে)। এখানে
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ডি.এন.টি ডিপার্টমেন্টটি দেশে একেবারেই নতুন এবং এ
বিষয়ে আর কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন
পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট এ "কম্পিউটার টেকনোলজি" তে পড়ার সুযোগ থাকলে-ও
"কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী" আর কোন প্রতিষ্ঠানে নেই।
এবার আসা যাক প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের ফলাফলের বিষয়ে.. ২০০৭ সালে
প্রতিষ্ঠানের ২য় পর্বের ছাত্র-ছাত্রীরা সর্বপ্রথম সরাসরি বোর্ড পরীক্ষায়
অংশগ্রহণ করে ইর্ষনীয় ফলাফল করে সবার নজর কাড়ে এবং পাশের হারের দিক থেকে
বোর্ডের অন্য সকল প্রতিষ্ঠানগুলো হতে অনেক বেশী হয়.. এর পরবর্তীতে অন্যান্য
বোর্ড পরীক্ষায় সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকে। গত বছর (২০০৯) সালে
প্রতিষ্ঠানের ১ম ব্যাচ এর ৪ বছরের শিক্ষা কার্যক্রম-এর সমাপ্তি ঘটে। ১ম
ব্যাচের ৮ম পর্বের (সর্বশেষ পর্ব) বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল আর-ও
বিষ্ময়ের সৃষ্টি করে, ৮৬ জন পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং ৮৪ জন-ই উর্ত্তীণ হয়..
যার মধ্যে "ডি.এন.টি"-র ৪১ জন অংশ নিয়ে সবাই উর্ত্তীণ হয়, যা করিগরী শিক্ষা
বোর্ডে পূর্বে দেখা যায়নি। মোট জি.পি.এ-র ক্ষেত্রে-ও একই অবস্থা.. দেশে
ইতিপূর্বে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এত ভালো ফলাফল করেছে কিনা আমার (মানে
আমাদের!!) জানা নেই! নিচের লিঙ্ক-এ ফলাফলটি রয়েছে.. এখানে ক্লিক করে ফলাফল টি দেখুন।(দুঃখিত, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফলাফল টি খুজেঁ পাচ্ছি না!! তাই ফেসবুক পেজ এর লিংক দিলাম।)
অত কিছুর পর প্রতিষ্ঠানের অর্জনের কথা বলা যাক.. ২০০৮ সালে ফেনী কম্পিউটার ইনষ্টিটিউট APACC এর সদস্যপদ লাভ করে।
ইনষ্টিটিউটে প্রযুক্তি ব্যবহার সুযোগ সুবিধা ভালোই.. এবং পযাপ্ত। যদিও কোনো
এক রহস্যজনক কারণে প্রায় ৩ বছর যাবৎ ল্যাব-এ ইন্টারনেট ব্যাবহারের খরচ
সরকার বহন করছে না! ছাএ-ছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় নেট চালু রয়েছে..
কিন্তু নেট-র গতি মাশাল্লাহ্...!! সরকার যদি এই খরচ বহন করত তাহলে আরো ভালো
গতির ইন্টারনেট সেবা ছাত্র-ছাত্রীরা পেত বলে আশা করা যায়।
প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারীভাবে ৭৪ টি পদের সৃষ্টি হয়েছে.. তার মধ্যে এখনো
কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি! তবে ১৩ জন কর্মরত রয়েছেন এবং তারা সবাই ডেপুটেশনে
এসেছেন.. তবে এক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষকদের প্রাণবন্ত প্রচেষ্টার কথা
অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার সময় হতে তারা প্রচুর
খাটুনি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান করে যাচ্ছে.. এবং তাদের এই
পরিশ্রমের কারণেই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে।
কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষকদের এত পরিশ্রম করতে
দেখিনি/শুনুনি। তবে তাদের উপর চাপ কমানোর জন্য হলেও দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ
দেওয়া জরুরী। এছাড়াও ৩ জন্য অতিথি শিক্ষক রয়েছে বর্তমানে।
বিষ্ময়ের ব্যাপার হল প্রতিষ্ঠানটি অদ্যো সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত। এ জন্য
শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের
জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক..
আরেকটি কথা বলা যায় প্রতিষ্ঠানের প্রথম অধ্যক্ষ জনাব শাহ আলম স্যারের
উদ্দ্যোগের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা এই পরিবেশ পেয়েছে এবং তার দেখানো পথেই
প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে।
একটি দুঃখের বিষয় হল ডি.এন.টি ডিপার্টমেন্টের ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার
জন্য ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় "ঢাকা প্রকৌশল ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়" (ডুয়েট)-এ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনা! এ
ব্যাপারে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
প্রতিষ্ঠানটি হতে বের হয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী-ই বর্তমানে দেশের বিভিন্ন
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কিছু ছাত্র-ছাত্রী ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। এ ছাড়া-ও অনেকেই বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে
কর্মরত রয়েছে। তন্মোদে গুটি কয়েক সাবেক ছাত্র নিজ প্রচেষ্টায় বিভিন্ন
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানীতে কর্মরত.. যা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য
অত্যন্ত গর্বের বিষয়। যদিও প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সরকারের উদাসীনতার কারণে বা
প্রচারের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে আই.টি. সেক্টরে যুক্ত বেশীর ভাগ
মানুষই জানেনা। ফলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচ্ম্যান্ট/ইন্টার্ণশিপের জন্য
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ছাত্র-ছাত্রীরা যোগাযোগ করলে হতাশাব্যাঞ্জক কথা
বার্তা শুনতে হয়.. অনেকের বলেন দেশে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে.. অথচ তারাই
জানেন না! অথচ তুলনামূলক ভালো বেসিক এর কারণে দেশের বিভিন্ন বেসরকারী
প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দক্ষতা অজর্নের বিরাট সুযোগ রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের।
শুধুমাত্র সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও আইটি সেক্টরের অজ্ঞতার কারণে
ছাত্র-ছাত্রীরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে! তাই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি তথ্য
প্রযুক্তির সাথে যুক্ত সকলের সুদৃষ্টির আশা করছি।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের লিংক
প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজ.. আরও বিস্তারিত কিছু জানতে ক্লিক করুন
-লেখক উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিদায়ী ছাত্র।
লেখাটি এখান থেকে নেয়া।