মাকড়সার জালের মত সমস্যা ঘিরে ধরেছে ছাগলনাইয়ার ঐতিহ্যবাহী উত্তর কুহুমা উচ্চ বিদ্যালয়কে। সমস্যার ভারে ন্যুয়ে পড়ছে এ বিদ্যালয়টি। অযত্ম আর অবহেলা পিছু ছাড়ছে না স্বনামধন্য এ বিদ্যালয়টির। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, ভবন, চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র, খেলার মাঠ, কম্পিউটার ভবন, বিজ্ঞান সামগ্রী, বিজ্ঞান ভবন, পাঠাগার, কম্পিউটার, টিউবওয়েল, ল্যাট্রিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু। এতসব নেইয়ের মধ্যেই মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্লাস করছে রাধানগর ইউনিয়নের তিন গ্রামের মাধ্যমিক পর্যায়ের কয়েক’শ ছাত্র-ছাত্রীরা। উত্তর কুহুমা, লক্ষ্মীপুর ও নিচিন্তা গ্রামের অভিভাবকদের একমাত্র ভরসা এ বিদ্যালয়টির উপর। অথচ সমস্যা লাঘবে সংশ্লিষ্ট কারোরই এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। প্রায় প্রতি বছরই বাজেটে শিক্ষাখাতকে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হলেও এর কোন সুফল ভোগ করেনি এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার ২৮ বছরের মধ্যে উত্তর কুহুমা উচ্চ বিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রী দেশের বিভিন্ন দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে দেশ সেবার করার সুযোগ পেলেও সরকারের সুদৃষ্টির অভাবে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এ বিদ্যালয়টি। টিনশেডের ভবনের বিদ্যালয়টির র্দুভোগ আর দুর্গতি দূর করতে কারোরই যেন দরকার নেই। বর্ষার পুরো মৌসুমটাই বন্ধ রাখতে হয় বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। নিচু ভূমিতে স্থাপিত বিদ্যালয়টি সামন্য বৃষ্টিতেই যেন ভাসতে থাকে। এ কারণে অনেকে উত্তর কুহুমা উচ্চ বিদ্যালয়কে টিপ্পুনি কেটে বলেন, ‘জলে ডোবা হাই স্কুল’। সরেজমিন এ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির করুণ চিত্র। দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা দিচ্ছিল। ৯৫ সালে ফ্যাসেলিটিজ বিভাগের অর্থায়নে নির্মিত ওই ভবনে ভেতর যখন বেলা ১১টার দিকে পরীক্ষা চলছিল, ঠিক তখনই মশুল ধারে নামে বৃষ্টি। মুহুর্তেই ছাত্রছাত্রীরা ছাতা মেলতে শুরু করে। এক হাতে ছাতা এক হাতে খাতা-কলম। এভাবেই নির্ধারিত সময়ে শেষ করে তাদের পরীক্ষা। একেবারে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা ভবনের ছাদ ছুয়ে যেভাবে পানি পড়ছে তা দেখে মনে হয়েছে ছাদ নয় যেন মাথার উপর চালুনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বর্তমান সরকার কার্যক্রম চলালেও এর কোন ছোঁয়া লাগেনি এখানে। ডিজিটালতো দুরের কথা এনালগের চেয়ে পিছিয়ে আছে এ বিদ্যালয়টি। জানা যায়, ১৯৮২ সালে উত্তর কুহুমা বৈদারাম দিঘীতে স্থানীয়দের সহযোগীতায় স্কুলটি স্থাপিত হয়। প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গার দিঘীতে এমপিওভুক্ত এ স্কুলটি স্থাপিত হলেও সরকারি পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিদ্যালয়টির রুগ্ন চিত্রের পরিবর্তন ঘটছে না। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিম উদ্দিন আক্ষেপ করে নোয়াখালী ওয়েবকে জানান, ভবনের অভাবে ২২৭ জন ছাত্রছাত্রীর ক্লাস নেয়াটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সামন্য ধমকা হাওয়া হলেই নড়তে শুরু করে টিনশেডের জরাজীর্ন ভবনটি। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্টু ব্যবস্থা না থাকায় সারা বছরই বন্যা লেগে লাকে। ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের ভবনটির চুন সুরকি পড়ে নষ্ট হচ্ছে প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র। এছাড়া বৃষ্টি হলে ছাদ ছুয়ে পানি পড়ে চেয়ার টেবিলের পাশাপাশি দাপ্তরিক কাগজ পত্রও নষ্ট হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ফ্যাসিলিটিজের এ ভবনটি ভেঙ্গে কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে এনিয়ে সারাক্ষণ টেনশনে থাকতে হয় আমাদের। শিক্ষকরা জানান, পর্যাপ্ত ভবন, চেয়ার টেবিল না থাকায় ক্লাস নিতে খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। গাদাগাদি করেই ছাত্রছাত্রীরা তাদের ক্লাস নিচ্ছে। এছাড়া ভবনের পাশে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি টিউবয়েল দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, উপযুক্ত খেলার মাঠ, স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিনও নেই এখানে। নেই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যম কম্পিউটারও। এছাড়া শূন্য রয়েছে শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ। শিক্ষকরা আরও জানান, ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে মামলা মোকাদ্দমার কারণে গত আড়াই বছর সম্পূর্ণ অভিভাবক শূন্য ছিল প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এডহক কমিটি গঠন হয়েছে বলে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন। ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ক্ষমতার রশি টানাটানি করলেও স্কুলের ভাগ্য পরিবর্তনে তাদের কোন উদ্যোগ নেই। নেই কোন স্বদিচ্ছাও। বিদ্যালয়ের মাঠের তিন পাশে জমাট বাধা নোংরা পঁচা দুর্গন্ধময় পানি থেকে ধেয়ে আসা উৎকট দুর্গন্ধ তাদের ক্লাস করা দায় হয়ে পড়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মেরামত এবং নতুন ভবন নির্মাণসহ স্কুলে পড়া লেখার নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করার দাবি জানায় তারা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ এনামুল হক জানান, উত্তর কুহুমা উচ্চ বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। বিশেষ করে জরুরী ভিত্তিতে এখানে স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি জানান। |
ছাতা মাথায় ক্লাস করতে হয় ছাগলনাইয়ার উত্তর কুহুমা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
Labels:
সব সংবাদ