(২২ জানুয়ারী ২০১৩) ফেনীর বিসিক শিল্প নগরীর পাশে আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ম্যাচ ফ্যাক্টরির কর্মকর্তাদের হামলায় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলায় সময় টিভির ক্যামেরাম্যান জুলহাস তালুকদার আহত ও তার ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।
সোমবার বিকেল ৫টার দিকে শহরের চাড়িপুর বিসিক শিল্প নগরীর ওই ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুনে এবং শ্রমিক নিহতের গুজবে ওই মিলে কর্মরত শ্রমিকদের স্বজনদের মধ্যে উকৎণ্ঠা বেড়ে যায়। স্বজনরা ফ্যাক্টরির গেটে ভিড় করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ফ্যাক্টরির ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে ফ্যাক্টরির নিরাপত্তারক্ষীরা গেট বন্ধ করে দেয়।
এসময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে গোপন করতে গিয়ে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বাইরে থেকে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা এবং ভেতর থেকে কারখার লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।
এদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ ঘটনা আড়াল করতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরির ভেতর আগুন লাগলে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরা কারখানার প্রধান গেট বন্ধ করে দেয়। তারা ফ্যাক্টরির বাইরের লোকজনকে কোনো তথ্য দিচ্ছিল না।
খবর পেয়ে পুলিশ, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও গেট বন্ধ থাকায় অগ্নিনির্বাপক গাড়ি, পুলিশ ও গণ মাধ্যমকর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারছিলনা। একপর্যায় ভেতরের অবস্থা জানতে না পেরে স্থানীয় ও ভেতরের শ্রমিকদের স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হয়ে গেট খোলার চেষ্টা করে।
এসময় ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে বিক্ষুব্ধদের ওপর ইট পাটকেল ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ স্বজনরা।
ফেনী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে হামলায় তাদের গাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দেড়ঘণ্টা পর ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক মাইনুল আবছার ও গণমাধ্যম কর্মীরা ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করলে কারখানার নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী এবং কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কিছু শ্রমিক তাদের ওপরও হামলা চালায়। এক পর্যায় তাদেরকে একটি রুমে আটকের চেষ্টা করে এবং নিরাপত্তা রক্ষীরা সময় টিভির ক্যামেরা ভাঙচুর করে।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাবের সহায়তায় সংবাদমাধ্যম কর্মীরা কারখানার ভেতর ঢোকার সুযোগ পায়। বাহির থেকে আহত কয়েক জনকে বিভিন্ন দিকে নিতে দেখা গেলেও পরে তাদের ভেতরে পাওয়া যায়নি। তবে অসংখ্য শিশু শ্রমিককে সেখানে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। যাদের বয়েস সর্বোচ্চ ১২ বছর।
সাংবাদিকরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা রক্ষীরা তাদের গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে তাদের কথা বলতে দেয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফ্যাক্টরির একটি অংশে অনেক ছাই। সেগুলো পরিস্কার করতে ফ্যাক্টরির লোকজন ব্যস্ত। তখনও থেমে থেমে আগুন জ্বলছিল।
আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরি সহকারী ব্যবস্থাপক মোমিনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ভিতরে অসাবধানতাবশত আগুন লেগেছে। তারা তা নিয়ন্ত্রণ করেছে। তার দাবি, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
প্রবেশাধিকারে বাধা দেওয়া সর্ম্পকে তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্খিত ছিল।
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইফুল হক বাংলানিউজকে জানান, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার জন্য ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ চরম অসহযোগিতা করেছে। বিষয়টি গভীর ভাবে তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
-->