(১৪ জানুয়ারি ২০১৩) ফেনী থেকে মাইক্রোবাসটি কুমিল্লার উদ্দ্যেশে রওনা হয় তখন সন্ধ্যা সাতটা। এক ঘন্টা পর মাইক্রোবাসটি পৌঁছায় সোয়াগাজির একটি নির্জন স্থানে। প্রস্রাব করার অজুহাতে থামানো হয় মাইক্রোবাস। আর থামাবার সঙ্গে সঙ্গে চালককে টেনে পেছনের সিটে নিয়ে রশি দিয়ে হাত বেঁধে ফেলা হয়। হত্যা করা হয় শ্বাসরোধ করে। এরপর জীবিত মানুষের মত করে বসানো হয় সিটে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১২ মাইল দূরে কুমিল্লার (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক) জগন্নাথপুরের একটি নির্জন জায়গায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয় চালকের লাশটি। ফেনীর স্টার লাইন গ্রুপের মাইক্রোবাস চালক আবুল কালামকে (৫০) এভাবেই হত্যা করে ঘাতকরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতারকৃত তিন তরুণ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত ঘটনা বর্ননা করে। তারা বলেছে, মাইক্রেবাস ছিনতাইয়ের জন্যই পরিকল্পিতভাবে চালকে হত্যা করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ওমর ফারুক (১৯), কবির হোসেন (১৯) ও মেহেদী হাসান (২০)। আর ছিনতাইকৃত মাইক্রোবাসটি বিক্রিকালে ডিবি পুলিশ শুক্রবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলানগর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে। তাদেরকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।
ডিবির এডিসি (পশ্চিম) মশিউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃতরা মাইক্রোবাসটি ছিনতাইয়ের উদ্দ্যেশে গায়ের হলুদের অনুষ্ঠানের কথা বলে গত ৯ তারিখ বিকালে মাইক্রেবাসটি ভাড়া করে। ভাড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ জন্য অগ্রিম প্রদান করে ৫শ' টাকা। পরে পথিমধ্যে চালককে হত্যা করে লাশ রাস্তায় ফেলে দেয়। তাদের সঙ্গে তাজুল ইসলাম নামে আরো একজন ছিল। জহিরুল পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃত ওমর ফারুকের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চকবাজার, পেশায় সে ট্রাকের হেলপার। মেহেদী হাসান, জুতা ব্যবসায়ী, কবির হোসেন একজন ইলেক্টিশিয়ান ও পলাতক তাজুল ইসলাম গাড়ি চালক। তাদের তিনজনেরই বাড়ি কুমিল্লার বারপাড়া। মেহেদী হাসান জানায়, তার বাবা কুমিল্লা সড়ক জনপথ বিভাগের একজন গাড়ি চালক। ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকেই তারা চার বন্ধু পরিকল্পনা করে নতুন দেখে মাইক্রোবাস ছিনতাই করার। আর বিক্রি করে পাওয়া যাবে মোটা অংকের টাকা। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী গত ৯ জানুয়ারি দুপুরে তারা কুমিল্লা থেকে ফেনীতে পৌঁছে। তবে যাওয়ার আগে মেহেদী হাসান মহল্লার দোকান থেকে দুই টাকায় ( চার টুকরা) পাটের রশি কেনে। এরপর ফেনী এএসকে রোডের স্টার লাইন গ্রুপের মাইক্রোবাসটি সাড়ে তিন হাজার টাকায় ভাড়া করে। এসময় বলা হয় তারা কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে। রেন্টকার ম্যানেজারকে কবির হোসেন অগ্রিম ৫শ' টাকা প্রদান করে। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা চারজন মাইক্রোবাসে কুমিল্লার উদ্দ্যেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে মাইক্রোবাসের তেলের টাকাও পরিশোধ করে কবির। মাইক্রোবাসের সামনে সিটে চালকের পাশে বসে ওমর ফারুক। আর চালকের পেছনের সিটে বসে তাজুল ইসলাম, মাঝে কবির হোসেন তার পাশে বসে মেহেদী হাসান। সে আরো জানায়, পথিমধ্যে প্রস্রাবের কথা বলে মাইক্রোবাস থামানো হয়। এ সময় তাজুল তার সঙ্গে থাকা গায়ের চাঁদর চালকের গলায় পেছিয়ে পেছনের সিটে নিয়ে যায়। মেহেদী রশি দিয়ে চালকের হাত বেঁধে ফেলে। বাঁচার জন্য চালক আবুল কালাম বলে ওঠে, 'তোমরা আমার ছেলের বয়সি, আমাকে মেরো না'। তার কাঁকুতি-মিনতির মধ্যেই তাজুল তার গলা চেপে ধরে। বাবা-মা বলে চিত্কার দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় মেহেদী সামনের সিটে গিয়ে বসে। আর মৃত চালককে জীবিত মানুষের মত বসানো হয় পেছনের সিটে। মাইক্রোবাস চালায় ওমর ফারুক। পরে জগন্নাথপুরে নির্জন স্থানে চালকের লাশটি রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। কবির হোসেন জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর তারা কুমিল্লার একটি হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরের দিন শুক্রবার রাতে মাইক্রোবাসটি বিক্রির চেষ্টাকালে ডিবি পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাজুল পালিয়ে যেতে সমক্ষ হয়।
-->