ফেনীতে শিক্ষার নামে কিন্ডারগার্টেনের রমরমা বাণিজ্য।

(২৩ সেপ্টম্বর ২০১২):: ফেনী শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মানসম্মত শিক্ষার নামে চালানো হচ্ছে কিন্ডারগার্টেনের রমরমা বাণিজ্য! অন্যান্য প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ব্যবস্থায় মানসম্মত শিক্ষার কথা বলা হলেও মূলত এর নামে চলছে প্রতারণা। এরা এক এক সময় এক নাম ব্যবহার করছে। কখনো কিন্ডার গার্টেন, কখনো একাডেমী, কখনো বিদ্যা নিকেতনসহ বিভিন্ন নামকরন করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ৪র্থ থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত চালু হলেও নামের শেষে স্কুল এন্ড কলেজ ব্যবহার করেও অভিভাবকদের আকৃষ্ট করছে। আর এর শিকার হচ্ছে, ফেনীর হাজার হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী। ফেনীর আনাচে-কানাচে গত কয়েক বছরে প্রায় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু, এদের বেশির ভাগেরই নেই সরকারি অনুমোদন। নেই দক্ষ শিক্ষক, আবকাঠামোগত সুবিধা, খেলাধুলার সুবিধা, সাংষ্কৃতিক চর্চাসহ মেধা বিকাশের কোনো সুযোগ। কিন্ডারগার্টেন নামে এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারিভাবে কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। আইনের দুর্বলতার কারণে যে কেউ ইচ্ছে করলেই কিন্ডারগার্টেন নাম দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারেন। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি থেকে ৩/৪ জন করে শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। কেউ কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সামঝতা করে পরীক্ষা দিচ্ছে। সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগ কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠানের ফলাফল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় অত্যন্ত করুণ! সরেজমিন দেখা গেছে, কোনোটিরই নিজস্ব প্রতিষ্ঠানিক ভবন নেই। ভাড়া বাসায় অথবা ফ্ল্যাটে কবুতরের খোপের মতো কামরায় ঘিঞ্জি পরিবেশে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। রোমানা তানজিন তানিয়া নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের পাঠ না বুঝলেও ক্লাস করতে হয়। তাই, বিদ্যালয়ের পাশাপাশি ৬টি বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে। খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাইমুর রহমান জানায়, শ্রেণীকক্ষগুলোতে বসারই জায়গাই হয়না, খেলবো কোথায়? তা ছাড়া বাইরেও খেলাধুলার সময় নেই। শুধু এ দু’জন শিক্ষার্থীই নয়, এরকম অনেক শিক্ষার্থীর একই অভিযোগ। ভাড়া ঘরে কার্যক্রম চালানোর পর বিলুপ্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যও কম নয়। শুধুমাত্র চলতি বছরে উপজেলায় অস্তিত্ব হারানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৭টি। নানা অজুহাত দেখিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় উদ্বৃত্ত পরিমাণে টাকা নেওয়া হলেও তুলনামূলকভাবে খারাপ রেজাল্ট করে যাচ্ছে অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন। এসব প্রতিষ্ঠানে ডোনেশনের (অনুদান) নামে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। যে শিক্ষার্থীর অবিভাবক যত বেশি ডোনেশন দেবেন, তার ছেলে/মেয়ে ততই ভালো রেজাল্ট করবে। তাই, এসব প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের বৈষম্যও লক্ষণীয়।

-->