(৭ এপ্রিল ২০১২) মাছে ভাতে বাঙালী, এমন প্রবাধ প্রবচনের সাথে বর্তমান বাস্তবতার মিল পাওয়া সত্যিই দুস্কর। মানুষের অপরিনামদর্ষী ক্রিয়া কর্মের ফলে ক্রমশ: হারিয়ে যাচ্ছে মাছের বিপুলা-বিশাল ভান্ডার। ফসলী জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগের ফলে হাজার প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আজ আর দেখতে পাওয়া যায়না। জমি বাড়েনি বেড়েছে মানুষ, কমেছে আবাদ যোগ্য ফসলী জমি, কমেছে খাল-বিল পুকুর জলাশয়। ফলে জনসংখ্যার তুলনায় কমেছে মৎস্য সম্পদের উৎপাদন ও যোগান। মৎস্য চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার দরুন দেশে আমিশ ঘাটতি প্রকট। বর্তমানে মাছ চাষ লাভজনক একটি প্রযুক্তি। এর জন্য প্রয়োজন অনুসন্ধিৎসু জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রশিক্ষন। আবার এমন অনেকে আছেন যারা মনে করে পুকুরে কিছু মাছ ছেড়ে দিলেই হলো এরা আপনা আপনিই বাড়বে। মাছের আবার যতœ আত্তির-কি? না- দিন বদলেছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুকুর হয়ে উঠবে রুপার খামার। হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া বছরে অনধিক ২ বার চাষের মাধ্যমে বদলে যেতে পারে ভাগ্যের চাকা। তবে চাষের আগে চিনতে হবে হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়ার জাত, জানতে হবে চাষের কলা কৌশল। হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া কি ? - তেলাপিয়ার অবাঞ্ছিত বংশ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে প্রায় পুরুষ-স্ত্রী সকল পোনা তেলাপিয়ায় হরমোন ট্রিটমেন্ট প্রয়োগের দ্ধারা এক লিঙ্গের পুরুষ তেলাপিয়ায় রূপান্তরের নাম হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া। এই তেলাপিয়ার প্রজনন ক্ষমতা না থাকার ফলে এর দৈহিক বৃদ্ধি সাধারণের তুলনায় ৩০-৪০% বেশী হয়। মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষের জন্য প্রয়োজন এক লিঙ্গের অথাৎ পুরুষ পোনা উৎপাদন। পুরুষ পোনা উৎপাদনের জন্য রেনু পোনাকে আলফা মিথাইল টেস্টেটেরন নামক হরমোন মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। এক লিঙ্গে রূপান্তরের সফলতা নির্ভর করে রেনু পোনাকে হরমোন মিশ্রিত খাবার খাওয়ানোর মাত্রা, হরমোন এবং হরমোন দ্রবনের জন্য ব্যবহৃত মনোসেক্স তেলাপিয়া হ্যাচারী গড়ে উঠেছে। এই মাছের চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ। তাই অতি অল্প সময়ে হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যারা এই মাছ চাষ করতে চান তাদেরকে এমন পুকুর বা জলাশয় নির্বাচন করতে হবে যেখানে সকাল বিকাল রোদ পড়ে এবং অধিক গাছপালা বা ঝোপ-জঙ্গল মুক্ত। পুরনো পুকুর হলে সেচ দিয়ে অবাঞ্চিত রাক্ষুসে মাছ ধরে ফেলতে হবে। এরপর প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরী চুন দ্রবন প্রয়োগ করে ছিটিয়ে দিতে হবে। পানি ভরাট করে প্রতি শতাংশে ৫-৭ কেজি গোবর, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ৭ দিনের মধ্যে পুকুরের পানি সবুজ আকার ধারণ করলে বুঝতে হবে এখনই পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময়। প্রতি শতাংশে দেড়/দুই ইঞ্চি সাইজের ২৫০ টি হারে পোনা ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পরের দিন হতে যে কোন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের তৈরী পিলেট খাবার মাছের দেহের গড় ওজনের ৮% হারে দৈনিক ৩ বার হারে প্রয়োগ করতে হবে। মাছের ওজন বাড়ার সাথে সাথে খাবার প্রয়োগের হারও গড় ওজনের ৪/৫ % এ নিয়ে আসতে হবে এবং বড় মাছে খাবার দিতে হবে দৈনিক ২ বার। এ ভাবে সঠিক ভাবে চাষ পদ্ধতি অনুসরন করলে ৬ মাসে একটি মাছ ২০০-২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। নির্বাচিত সমীক্ষার তথ্যমতে প্রতি শতাংশে ৪০-৪৫ কোজি পর্যন্ত উৎপাদন হয়ে থাকে। মনোসেক্স তেলাপিয়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে চাষীকে কয়েকটি বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে- ১. হ্যাচারীর পরিবেশ ও পারিপাশ্বিক ব্যবস্থা মজবুত কিনা। ২. দক্ষ টেকনিশিয়ান ও মাননিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা আছে কিনা। ৩. ডিম ফুটানোর পর হরমোন ট্রিটমেন্ট যথাযথ ভাবে করা হয় কিনা। ৪. নূন্যতম পক্ষে রেনু পোনার হরমোন ট্রিটমেন্ট সময় কাল ২৮ দিন পূর্ণ করা হয় কিনা। ৫. পোনা মাছ কোন জাতের (চিত্রলাড়া-থাইল্যান্ড, জেনোমার সুফ্রিম-ফিলিফাইন, এক্সেল ও নিউ গিফু-চীন উলেখিত দেশীয় জাত সমূহ উত্তম) তা নিশ্চিত হওয়া। ফেনী জেলায় বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর পুকুর দীঘি বা জলাশয়ে তেলাপিয়া চাষ হচ্ছে। দাগনভূঞা উপজেলার মমারিজপুরের ইলিয়াছ, আলাইয়ারপুর গ্রামের কামরুল, কোরেশ মুন্সির রুহুল আমীন, আলামপুরের জাহাঙ্গীর, আমীরগাঁও রিপন, চানপুরের মফিজুর রহমান, হীরাপুরের নন্দলাল এ রকম বেশ কয়েকজন চাষীর অভিযোগ অনেক হ্যাচারী মালিক খরচ বাঁচানো এবং অধিক মুনাপার লোভে সাধারন জাতের পোনার ডিম সংগ্রহ করে আবার পরিপূর্ণ মাত্রায় হরমোন ট্রিটমেন্ট না দিয়ে পোনা বিক্রি করে, ফলে চাষের পুকুরে মাছ হয় হরেক রকম, সঠিক ওজনতো আসেইনা সর্বোপরী চাষীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুঙ্খিন হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। চাষীদের দাবী সরকারী পর্যায়ে হ্যাচারী সমূহের পোনা উৎপাদন ও সরবরাহে মান পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা করা হলে মাছ চাষে যেমন সুফল আসবে, তেমনি দারিদ্র বিমোচন তথা কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনার দ্ধার উন্মোচিত হবে। আধুনিক ও বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষের জন্য সরকারী পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতা নিতে পারেন। স্থানীয় এনজিও সংগঠন যুই সোসাইটিও কৃষকদের বিনামূল্যে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া মাটি, পানির গুনাগুণ, মাছের বিভিন্ন রোগ-বালাই ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতা নিতে পারেন মৎস্য বিশেষজ্ঞ এম শাহজাহান-০১৭১১০৭২৯৪৫ ও বদরুল আলম, ০১৭১৩৩৮৮৭৪৮ নাম্বারে।ফেনীতে জনপ্রিয় হচ্ছে হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ
(৭ এপ্রিল ২০১২) মাছে ভাতে বাঙালী, এমন প্রবাধ প্রবচনের সাথে বর্তমান বাস্তবতার মিল পাওয়া সত্যিই দুস্কর। মানুষের অপরিনামদর্ষী ক্রিয়া কর্মের ফলে ক্রমশ: হারিয়ে যাচ্ছে মাছের বিপুলা-বিশাল ভান্ডার। ফসলী জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগের ফলে হাজার প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আজ আর দেখতে পাওয়া যায়না। জমি বাড়েনি বেড়েছে মানুষ, কমেছে আবাদ যোগ্য ফসলী জমি, কমেছে খাল-বিল পুকুর জলাশয়। ফলে জনসংখ্যার তুলনায় কমেছে মৎস্য সম্পদের উৎপাদন ও যোগান। মৎস্য চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার দরুন দেশে আমিশ ঘাটতি প্রকট। বর্তমানে মাছ চাষ লাভজনক একটি প্রযুক্তি। এর জন্য প্রয়োজন অনুসন্ধিৎসু জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রশিক্ষন। আবার এমন অনেকে আছেন যারা মনে করে পুকুরে কিছু মাছ ছেড়ে দিলেই হলো এরা আপনা আপনিই বাড়বে। মাছের আবার যতœ আত্তির-কি? না- দিন বদলেছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুকুর হয়ে উঠবে রুপার খামার। হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া বছরে অনধিক ২ বার চাষের মাধ্যমে বদলে যেতে পারে ভাগ্যের চাকা। তবে চাষের আগে চিনতে হবে হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়ার জাত, জানতে হবে চাষের কলা কৌশল। হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া কি ? - তেলাপিয়ার অবাঞ্ছিত বংশ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে প্রায় পুরুষ-স্ত্রী সকল পোনা তেলাপিয়ায় হরমোন ট্রিটমেন্ট প্রয়োগের দ্ধারা এক লিঙ্গের পুরুষ তেলাপিয়ায় রূপান্তরের নাম হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া। এই তেলাপিয়ার প্রজনন ক্ষমতা না থাকার ফলে এর দৈহিক বৃদ্ধি সাধারণের তুলনায় ৩০-৪০% বেশী হয়। মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষের জন্য প্রয়োজন এক লিঙ্গের অথাৎ পুরুষ পোনা উৎপাদন। পুরুষ পোনা উৎপাদনের জন্য রেনু পোনাকে আলফা মিথাইল টেস্টেটেরন নামক হরমোন মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। এক লিঙ্গে রূপান্তরের সফলতা নির্ভর করে রেনু পোনাকে হরমোন মিশ্রিত খাবার খাওয়ানোর মাত্রা, হরমোন এবং হরমোন দ্রবনের জন্য ব্যবহৃত মনোসেক্স তেলাপিয়া হ্যাচারী গড়ে উঠেছে। এই মাছের চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ। তাই অতি অল্প সময়ে হাইব্রিড মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যারা এই মাছ চাষ করতে চান তাদেরকে এমন পুকুর বা জলাশয় নির্বাচন করতে হবে যেখানে সকাল বিকাল রোদ পড়ে এবং অধিক গাছপালা বা ঝোপ-জঙ্গল মুক্ত। পুরনো পুকুর হলে সেচ দিয়ে অবাঞ্চিত রাক্ষুসে মাছ ধরে ফেলতে হবে। এরপর প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরী চুন দ্রবন প্রয়োগ করে ছিটিয়ে দিতে হবে। পানি ভরাট করে প্রতি শতাংশে ৫-৭ কেজি গোবর, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ৭ দিনের মধ্যে পুকুরের পানি সবুজ আকার ধারণ করলে বুঝতে হবে এখনই পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময়। প্রতি শতাংশে দেড়/দুই ইঞ্চি সাইজের ২৫০ টি হারে পোনা ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পরের দিন হতে যে কোন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের তৈরী পিলেট খাবার মাছের দেহের গড় ওজনের ৮% হারে দৈনিক ৩ বার হারে প্রয়োগ করতে হবে। মাছের ওজন বাড়ার সাথে সাথে খাবার প্রয়োগের হারও গড় ওজনের ৪/৫ % এ নিয়ে আসতে হবে এবং বড় মাছে খাবার দিতে হবে দৈনিক ২ বার। এ ভাবে সঠিক ভাবে চাষ পদ্ধতি অনুসরন করলে ৬ মাসে একটি মাছ ২০০-২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। নির্বাচিত সমীক্ষার তথ্যমতে প্রতি শতাংশে ৪০-৪৫ কোজি পর্যন্ত উৎপাদন হয়ে থাকে। মনোসেক্স তেলাপিয়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে চাষীকে কয়েকটি বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে- ১. হ্যাচারীর পরিবেশ ও পারিপাশ্বিক ব্যবস্থা মজবুত কিনা। ২. দক্ষ টেকনিশিয়ান ও মাননিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা আছে কিনা। ৩. ডিম ফুটানোর পর হরমোন ট্রিটমেন্ট যথাযথ ভাবে করা হয় কিনা। ৪. নূন্যতম পক্ষে রেনু পোনার হরমোন ট্রিটমেন্ট সময় কাল ২৮ দিন পূর্ণ করা হয় কিনা। ৫. পোনা মাছ কোন জাতের (চিত্রলাড়া-থাইল্যান্ড, জেনোমার সুফ্রিম-ফিলিফাইন, এক্সেল ও নিউ গিফু-চীন উলেখিত দেশীয় জাত সমূহ উত্তম) তা নিশ্চিত হওয়া। ফেনী জেলায় বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর পুকুর দীঘি বা জলাশয়ে তেলাপিয়া চাষ হচ্ছে। দাগনভূঞা উপজেলার মমারিজপুরের ইলিয়াছ, আলাইয়ারপুর গ্রামের কামরুল, কোরেশ মুন্সির রুহুল আমীন, আলামপুরের জাহাঙ্গীর, আমীরগাঁও রিপন, চানপুরের মফিজুর রহমান, হীরাপুরের নন্দলাল এ রকম বেশ কয়েকজন চাষীর অভিযোগ অনেক হ্যাচারী মালিক খরচ বাঁচানো এবং অধিক মুনাপার লোভে সাধারন জাতের পোনার ডিম সংগ্রহ করে আবার পরিপূর্ণ মাত্রায় হরমোন ট্রিটমেন্ট না দিয়ে পোনা বিক্রি করে, ফলে চাষের পুকুরে মাছ হয় হরেক রকম, সঠিক ওজনতো আসেইনা সর্বোপরী চাষীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুঙ্খিন হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। চাষীদের দাবী সরকারী পর্যায়ে হ্যাচারী সমূহের পোনা উৎপাদন ও সরবরাহে মান পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা করা হলে মাছ চাষে যেমন সুফল আসবে, তেমনি দারিদ্র বিমোচন তথা কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনার দ্ধার উন্মোচিত হবে। আধুনিক ও বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষের জন্য সরকারী পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতা নিতে পারেন। স্থানীয় এনজিও সংগঠন যুই সোসাইটিও কৃষকদের বিনামূল্যে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া মাটি, পানির গুনাগুণ, মাছের বিভিন্ন রোগ-বালাই ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতা নিতে পারেন মৎস্য বিশেষজ্ঞ এম শাহজাহান-০১৭১১০৭২৯৪৫ ও বদরুল আলম, ০১৭১৩৩৮৮৭৪৮ নাম্বারে।
Labels:
আলোকিত ফেনী,
কৃষি-পরিবেশ
