(২ এপ্রিল ২০১২) একটা জয়ই বদলে দিয়েছে দলটিকে। পরশু মোহামেডানকে হারিয়ে ফেনী সকার ক্লাব দারুণভাবে উজ্জীবিত। এখন স্বপ্ন দেখছে পেশাদার লিগে আরেকটা সাফল্যগাথা লেখার। মোহামেডান সেই আগের দল আর নেই। তার পরও তাদের জার্সিটা এখনো ওজনদার। এই মোহামেডানের বিপক্ষে জয়েরও ভিন্ন একটা তাৎপর্য আছে ফেনী সকারের কাছে। এত দিন নিজেদের মাঠে ঢাকার অনেক বড় দলের সঙ্গে ড্র করার প্রেরণা ছিল সকারের। এই প্রথম কোনো বড় দলের বিপক্ষে এল জয়। এরই সুবাদে পেশাদার লিগে টিকে থাকার একটা জীবনরেখাও পেয়ে গেছে ফেনীর দলটি।
ফেনী থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফেরা ঢাকার বড় দলগুলোর জন্য বরাবরই কঠিন। আবাহনী, শেখ জামালসহ সব বড় দলই ফেনীতে ড্র করে এসেছে। এবার সাদা-কালোরা সেখানেই হেরে এল ২-১ গোলে। জয়ের আনন্দে ভাসছে ফেনী। কাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে দলটির কোচ রেজাউল হকের কণ্ঠে ধরা পড়ল উচ্ছ্বাস, ‘এই জয়ে আমরা নতুন জীবন পেয়েছি। অবনমন এড়ানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। শহরবাসীরা আজ সারা দিনই অভিনন্দন জানিয়েছেন আমাদের।’
ফেনী সকার এই নিয়ে টানা তৃতীয়বার পেশাদার লিগ খেলছে। প্রথমবার হয়েছিল চতুর্থ, গতবার কোনো রকমে অবনমন এড়িয়ে হয়েছিল দশম। এবার প্রথম পাঁচ ম্যাচ জয়হীন। ঢাকায় ষষ্ঠ ম্যাচটায় রহমতগঞ্জকে হারিয়ে জয়ের দেখা পেল। আর পরের ম্যাচেই হলো মোহামেডান-বধ। সাত ম্যাচ থেকে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ১১ দলের লিগে সকার এখন সপ্তম স্থানে।
এবার ঢাকায় শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের সঙ্গে ড্র করেছে সকার। গত ফেডারেশন কাপে হারিয়ে দিয়েছিল আবাহনীকে। কিন্তু নিজের মাঠে বড় দলের বিপক্ষে জয় পাচ্ছিল না। ঢাকার দলগুলোর মাঠ একটিই—বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। এবার টাঙ্গাইলে ভেন্যু করেছে বিজেএমসি। ফেনী সকার খেলছে ফেনীর ভাষাশহীদ সালাম স্টেডিয়ামে। সত্যিকার অর্থে পেশাদার লিগের ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ পরিচয়টা বাঁচিয়ে রেখেছে এই ফেনী সকার। চলমান পঞ্চম পেশাদার লিগে ঢাকার বাইরের দল শুধু ফেনী সকারই। তাই দলটি টিকে থাকলে পেশাদার লিগের বিকেন্দ্রীকরণও ‘টিকে’ থাকে। দুই বছর ধরে খেলা ফেনী সকারের অধিনায়ক লুৎফর রহমান ফোনে বললেন, ‘ঢাকায় আমরা বড় ম্যাচ জিতেছি। কিন্তু নিজেদের মাঠে জয় পাচ্ছিলাম না। মাঠে দর্শকও আসছিল না। এই জয়টা খুব দরকার ছিল। দর্শকের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাচ্ছিলাম। এখন সেই দর্শকই আমাদের কাছে টেনে নিচ্ছে।’
পরশুর ম্যাচটায় জেতার পর দর্শক অভিনন্দনে সিক্ত হয়েছেন খেলোয়াড়েরা। প্রথম গোলটি করেছেন যিনি, স্থানীয় ফুটবলার সেই ইকবাল হোসেন উচ্ছ্বসিত, ‘মনে হচ্ছে অন্য একটা জগতে আছি। এখানকার সবাই এত খুশি, বলে বোঝাতে পারব না।’
দলটির খেলোয়াড় এবং পৃষ্ঠপোষক তাবিথ আউয়ালের কথা, ‘এখন হয়তো আমাদের টিকিট বিক্রিটা বাড়বে। আরও দর্শক আসবে মাঠে। এই জয়টা আমাদের জন্য বিরাট প্রেরণা। সবাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।’
১৯৮৯ সালে স্থানীয় কিছু খেলোয়াড় এবং ক্রীড়ামোদি মিলে গঠন করেন ফেনী সকার ক্লাব। ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে অফিস। ক্যাম্প চলছে রেলগেটের ভাড়া বাড়িতে। সেখানে এখন বইছে স্বস্তির সুবাতাস। দলটির ম্যানেজার আনোয়ার হোসেনের মুখে আশাবাদী উচ্চারণ, ‘মোহামেডানকে হারানোর পর মনে হচ্ছে, আমরা ছয়-সাতে থেকে লিগে টিকে থাকতে পারব।’
