ফেনীর ছোট নদী অবমুক্ত করে দেওয়ার আবেদন স্থানীয় জেলেদের

ফেনীর দাগনভুঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ও রাজাপুরে ছোট ফেনী নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় বেকার হয়ে পড়েছেন এলাকার পাঁচ শতাধিক মৎস্যজীবী। এ ছাড়া সেচের পানি না পাওয়ায় এলাকার কৃষি আবাদও ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ নদীটি অবমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। এ অবস্থায় নদীটি অবমুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

জেলেদের অভিযোগ

স্থানীয় মৎস্যজীবী সিরাজ, চান মিয়া, বেলাল ও আলমগীর বলেন, 'এলাকার শত শত জেলে পরিবারের আয়ের উৎস ছিল এই ফেনী ছোট নদী। কিন্তু স্থানীয় একটি মহল বহমান নদীটিকে মরা নদী ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে ব্লক ফিশারিজের জন্য লিজ নেয়। তারা নদীর বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের অজুহাতে নদীকে পৈতৃক সম্পত্তি করে রেখেছে। এখন সেখানে মাছ ধরা তো দূরের কথা, আমরা নদীতে গোসলও করতে পারি না। ফলে আমরা প্রায় পাঁচশ জেলে বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। লিজ বাতিলের জন্য গত ৪ মার্চ ফেনী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। এ অবস্থায় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে নদীটি অবমুক্ত করে না দিলে পথে বসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।' এলাকাবাসী জানান, কথিত ব্লক ফিশারি নামে অবৈধভাবে সিন্দুরপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বাশের বাঁধ নির্মাণ নদীটিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। তারা নদীতে জেলেদের নামতে দিচ্ছে না। তা ছাড়া নদীটি ব্লক করে দেওয়ার কারণে সেখান থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার নোনা পানি ঢুকে পড়লে তা আর বের হওয়ার সুযোগ থাকে না। এর ফলে ১৫ থেকে ২০ হাজার এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিন্দুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ভূঞা বলেন, সিন্দুরপুর মৎস্যজীীব সমবায় সমিতির নামধারীরা প্রকৃত মৎস্যজীবী নয়। তাদের কিভাবে নদীটি লিজ দেওয়া হয়েছে, সেটা বলতে পারছি না।'
এলাকাবাসী ও জেলেরা অভিযোগ করে আরো জানান, মিথ্যা তথ্য দিয়ে লিজ নেওয়ায় এলাকার বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার পেশাজীবী পরিবারের উপজীব্য ছোট ফেনী নদীটি বেদখল হয়ে যায়। এছাড়া যারা ব্লক ফিশারিজের জন্য লিজ নিয়েছে তারা তিন-চার গুণ বাড়তি টাকায় অলিখিতভাবে অন্যের নিকট হস্তান্তর করেছে বলেও অভিযোগ করে এলাকাবাসী। দখল হওয়ার কারণে ছোট ফেনী নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রাম শরীফপুর, গৌতমখালী, রাজাপুরঘোনা, বিরলী, ডমুরুয়াসহ অন্যান্য গ্রামের মৎস্যজীবীরা অনেকটা বেকার হতে বসেছেন বলে জানান তাঁরা।

ঘটনার বিবরণ

জানা যায়, জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে বহমান ছোট ফেনী নদীটির ৮৪৬, ১৮০, ১৮৮০ অংশ ৮৫৩, ৯৫২ ও ৭৪৪ দাগে মোট ৫৩.৩৬ একর জলমহাল প্রকৃত মৎস্যজীবী সংগঠনকে ইজারার দেওয়ার জন্য ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ডুমুরিয়া ব্লক ফিশারিজ-১-এর জন্য ইজারার ৯৮ হাজার ৭০০ টাকা ও ডুমুরিয়া ব্লক ফিশারিজ-২-এর জন্য ৬৩ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। লিজের জন্য আবেদন করলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (রাজস্ব বিভাগ) থেকে সিন্দুরপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে তিন বছরের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করে। কিন্তু লিজ পাওয়ার পর লিজের অংশ ছাড়াও পুরো নদীটি দখল করে মাছ চাষ শুরু করে তারা। ফলে বিপদে পড়ে যায় এলাকার শত শত জেলে ও কৃষিজীবী পরিবার।

অভিযুক্তদের বক্তব্য

এ ব্যাপারে সিন্দুরপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিল্লাত রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছি। আমাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ঠিক না।' আপনারা প্রকৃত মৎস্যজীবী কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

রাজাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবদুল গোফরান বলেন, মৎস্যজীবী না হলেও সিন্দুরপুর মৎস্যজীবী সমিতিকে জেলা সমবায় অফিস কিভাবে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কিন্তু ডুমুরিয়া ব্লক ফিশারিজ-১ ও ২ দীর্ঘদিন যাবত জলমহাল হিসেবে চিহ্নিত। তাই তাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে।' এ প্রসঙ্গে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইজারা নেওয়ার পর সমিতি তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে ব্লকটি পুনর্লিজ দিলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

আসাদুজ্জামান দারা, ফেনী