লাল রক্তের কালো বাণিজ্য

ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে মায়া ক্লিনিকে অবৈধভাবে রক্ত কেনাবেচার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। গত শুক্রবার রাতে এক দিনমজুরকে এক ব্যাগ রক্ত নেয়ার কথা বলে গোপনে দুই ব্যাগ রক্ত নিয়ে দাম পরিশোধে প্রতারণা করতে গিয়ে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। র‌্যাব, প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগকারী সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রাজীব হোসেন নামে এক দিনমজুরকে এক ব্যাগ এবি পজেটিভ রক্তের জন্যে ক্লিনিক মালিকরা ডেকে নেয়। ২ হাজার টাকা দাম সাব্যস্ত করে এক ব্যাগ রক্ত নেয়ার কথা বলে গোপনে আরেক ব্যাগ রক্ত নিয়ে নেয়। এ সময় রক্তদাতা রাজীব টের পেয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ আরো ২ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু দাম পরিশোধের সময় কেবল ২ হাজার টাকা দিলে রাজীব প্রতিবাদ জানায়। এসময় তাকে আর মাত্র ৫’শ টাকা দিতে চাইলে তিনি ২ হাজার টাকাই দাবী করেন। এ নিয়ে মালিকদের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তাকে মারধর করে ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়। রাজীব জানান,
ফেনীতে দীর্ঘদিন ধরে দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি ঘটনাটি তাৎক্ষনিক ফেনী থানা পুলিশকে জানালে তারা আমলে না নেয়ায় চলে যান মহিপালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন র‌্যাব ক্যাম্পে। র‌্যাবের ডিএডি কবির আহম্মদ জানান, অভিযোগ পেয়ে তারা রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঘটনাস্থলে আসলে ক্লিনিক মালিক পলাশ ও বিলাশ গা ঢাকা দেয়। এক পর্যায়ে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় তাদের আটক করে র‌্যাব। এ সময় আশপাশের ব্যবসায়ী, পথচারী সহ শত শত লোক এখানে ভিড় জমায়। সমবেত লোকজনের সামনে মালিকদ্বয় ঘটনা স্বীকার করে র‌্যাবের কাছে ক্ষমা চান। র‌্যাব ২ জনকেই ফেনী মডেল থানায় সোপর্দ করে। থানা সূত্রে জানা গেছে, তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অভিযোগকারী রাজীব জানান, তিনি মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তার মামলা না নিয়ে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের রক্ষার চেষ্টা করছে। পুলিশ সুপার মোঃ ইমাম হোসেন জানান, ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত ক্লিনিকের রক্ত কেনাবেচার (ব্লাড ব্যাংক) কোন লাইসেন্স নেই। অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে তারা ওই ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে তাদের রক্ত ব্যবসার সন্ধান পাওয়া গেলে তা সাময়িক বন্ধ করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, একশ্রেণীর মাদকাসক্ত ও দিনমজুর অসহায় লোকজনদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করে ওই ক্লিনিক মোটা অংকে বিক্রি করে থাকে। শহরের অন্যান্য ক্লিনিকেও তারা প্রয়োজন রক্ত সরবরাহ করে বলে সংশি ষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তাদের সাথে বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনীতিক দলের নেতৃবৃন্দের সখ্যতা থাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ করেও ফল পাওয়া যায় না। ফলে কাউকে তোয়াক্কা না করে অনেকটা ফ্রি-স্টাইলে তাদের এই অবৈধ ব্যবসা চলে আসছে।


সুত্র:ফেনীর সময়