ফেনীতে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা, ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়।

(২ এপ্রিল ২০১২) ফেনী জেলায় বেঙের ছাতার মত বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইট ভাটাগুলোর কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত এবং মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে আবাদি জমি ও বনভূমির। ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন কিংবা ছিমনি স্থাপনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিধান মানছেনা ছাড়পত্র পাওয়া ইটভাটাগুলো। আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম থাকলেও অনেক ইটভাটার ক্ষেত্রে তা মনে হয়নি। ফলে ঘটছে পরিবেশ বির্পযয়, বাড়ছে স্থানীয়দের রোগব্যাধি। অভিযোগ রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কেউ কেউ এসব ইটভাটা থেকে অবৈধভাবে মাসোহারা নিয়ে থাকেন। প্রতিটি জাতীয় দিবসেও ইটভাটাগুলোর মালিক প্রশাসনকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। মূলত একারণেই আইনের তোয়াক্কা না করে বছরের পর অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ওইসব ইটভাটা মালিকরা। অপরদিকে, আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটা ও গৃহনির্মানে। এতে প্রতিবছর বিপুর পরিমান জমি উর্বরা শক্তি হারিয়ে অনাবাদী ও খানাখন্দে পরিণত হচ্ছে জমি। একশ্রেনীর ইটভাটা মালিক জমির মালিকদের বিভিন্ন অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করছে। কৃষিবিদরা বলছেন, ওপরের অংশের মাটি কেটে নেয়ায় ওইসব জমির উর্বরা শক্তি ফিরে পেতে ১০-১৫ বছর সময় লেগে যেতে পারে। তবে ইটভাটায় প্রয়োজনে টপসয়েল ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে জেলার কৃষি বিভাগ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে জেলা ও থানার ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা টপসয়েল ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করলে ও এজন্য আবাদি জমিতে নেতিবাচক কোন প্রভাব ফেলবেনা বলে তারা দাবি করেন। এসব ইটভাটায় জালানি হিসেবে পাথরের কয়লার বদলে কাঠ, কয়লা পোড়ানো হচ্ছে। যা আইনত নিষিদ্ধ। এছাড়াও পোড়ানো হচ্ছে গাড়ীর পুরনো টায়ার, পোড়া মবিল, রাবার, মিল ফ্যাক্টরির বর্জিত নালায়ন, পলিষ্টার জাতীয় দ্রব্যাদি ইত্যাদি। এগুলো জালানি হিসেবে ব্যবহার করায় বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ওইসব এলাকায় পরিবেশ মারাত্মক ভাবে দূষিত হচ্ছে। ইটভাটার নিঃসৃত ধোঁয়ায় পার্শ্ববর্তী জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে, মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। ইটপোড়ানোর নিয়ন্ত্রন আইনের ৫নং ধারায় বলা হয়েছে, জালানি কাঠ দ্বারা ইটপোড়ানো নিষিদ্ধ। কোন বিশেষ স্থাপনা, পাহাড়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গবেষনা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি স্থাপনা থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। পরিবেশ বিজ্ঞানিদের এক গবেষণা থেকে জানাযায়, ইটভাটা থেকে প্রতিনিয়ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, কার্বন-মনোক্সাইড, সালফার অক্সাইড এবং ভাসমান বস্তুকণা (এসপিএম) বের হয়। যা পরিবেশকে ভয়াবহ ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ১২০ফুট উচ্চতার স্থায়ী 'জিগজাগ চিমনি'র পরিবর্তে অনেক ইটভাটায় অস্থায়ী টিনের চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১২সালের ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরনো সব অস্থায়ী টিনের চিমনি, জিগজাগ চিমনিতে রুপান্তর করার সরকারী নির্দেশ রয়েছে বলে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা ভেবে বানিজ্য মন্ত্রনালয় ২০১১ সালে ভারতে ইট রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফেনী জেলা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে ইটভাটা গুলোতে ব্যাপক রপ্তানির কারণে নতুন করে ইটভাটা স্থাপন ও ইট তৈরির হিড়িক পড়েছে। তবে ইটভাটাকে দেশের একটি প্রচলিত শিল্প হিসেবে দাবী করেছেন ইটভাটার মালিকরা। এ শিল্পকে বাঁচাতে ইটভাটার মালিকরা এর উপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানোর দাবি জানিয়েছেন, ফেনী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিষ্ট সাইফুল ইসলাম জানান, ফেনীর ৬টি উপজেলায় ৯২টি ইটভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে ৮৮টি, ছাগলনাইয়ায় ১৪টি, ফুলগাজীতে ৮টি, পরশুরামে ২টি, ফেনীসদরে ৪৭টি, সোনাগাজীতে ৬টি ও দাগনভূঞার উপজেলায় ২৮টি।